প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য সংক্ষিপ্ত বার্ষিক পাঠ পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (ন্যাপ)। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের করোনা পরিস্থিতিজনিত কারণে শিখন ঘাটতি পূরণ কল্পে এ সংক্ষিপ্ত বার্ষিক পাঠ পরিকল্পনা প্রকাশ হয়েছে। আগামী নভেম্বর থেকে বিদ্যালয় চালু করা গেলে এটি কার্যকর হবে এবং এর সময়সীমা নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
পরিমার্জিত বার্ষিক পাঠ পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষার উপযােগী সকল শিক্ষার্থীর জন্য মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার। এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য সরকার আইন ও
বিধি প্রণয়নসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ফলে শতভাগ শিশুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি, শ্রেণিকক্ষে জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠা, একীভূত শিক্ষা এবং শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষাচক্র শেষ করা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ উন্নয়নক্ষেত্রে উল্লেখযােগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে।
প্রাথমিক শিক্ষায় সরকারের অগ্রাধিকার এখন জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার চতুর্থ লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়ন। মার্চ ২০২০ পর্যন্ত মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি সাধিত হয়েছ। কিন্তু ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীন হতে ছড়িয়ে পড়া করােনা ভাইরাস মহামারী সারাবিশ্বের মতাে বাংলাদেশেও সংকটের সৃষ্টি করে।
স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষাক্ষেত্রেও এই মহামারির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সংক্রমণ রােধ করে মানুষের জীবন রক্ষার জন্য সরকার ১৭ মার্চ ২০২০
থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘােষণা করে। ছুটির মেয়াদ বাড়িয়ে পরবর্তীকালে ৩০ আগস্ট ২০২০ পর্যন্ত করা হয়। এই অপ্রত্যাশিত দীর্ঘ ছুটি প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে সরকারের লক্ষ্য অর্জনকে হুমকিতে ফেলেছে। করােনা সংকটে প্রাথমিক স্তরের প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
বর্তমান শিক্ষাবর্ষের শুরু থেকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমােদিত ও জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি কর্তৃক প্রণীত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সময়াবদ্ধ বার্ষিক পঠেপরিকল্পনা, ২০২০ অনুসরণ করে মার্চ ২০২০ পর্যন্ত শ্রেণি কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। এসময়ে পাঠ্যসূচির ২৫-৩০ ভাগ শিখন সম্পন্ন হয়েছে। ১৭ মার্চ থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত ছুটি থাকায়
শিক্ষার্থীদের শিখন লক্ষ্য অর্জনে বড় রকমের ঘাটতি হয়েছে। এই ক্ষতি পূরণ করে শিক্ষার্থীদের শিখন কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
সংসদ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘ ঘরে বসে শিখি ’, বেতারে প্রাথমিকের পাঠ প্রচার এবং অন্যান্য অনলাইনভিত্তিক মাধ্যমে পাঠ প্রচার সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু আর্থ-সামাজিক ও ভৌগােলিক কারণে শতভাগ শিক্ষার্থীকে এই ব্যবস্থার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। ফলে তাদের পক্ষে পরবর্তী স্তরের শিখনফল অর্জন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এজন্য করােনা মহামারী পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এই অবস্থা থেকে উত্তরণের। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করছে।
এরই অংশ হিসেবে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) পরিমার্জিত বার্ষিক পাঠপরিকল্পনা, ২০২০ প্রস্তুত করেছে। শিক্ষার্থীরা যেন শ্রেণিভিত্তিক আবশ্যকীয় প্রান্তিক যােগ্যতাসমূহ অর্জন করতে পারে এবং পরবর্তী শ্রেণিতে অর্জনযােগ্য যােগ্যতার সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ পাঠ্যবিষয়গুলাে আয়ত্ত করতে পারে তার ওপর জোর দিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি প্রস্তুত করা হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় প্রণীত এই পরিমার্জিত বার্ষিক পাঠপরিকল্পনা, ২০২০ অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে আশা করা যায় প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা করােনাজনিত কারণে শিখন ঘাটতি অনেকাংশে পূরণ করে পরবর্তী শ্রেণির শিখনফল অর্জনে প্রয়ােজনীয় দক্ষতা লাভ করবে। পরিমার্জিত বার্ষিক পাঠপরিকল্পনা, ২০২০ প্রণয়নে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ও সহযােগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। স্বল্প
সময়ে এই পরিকল্পনা প্রণয়নে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংক্ষিপ্ত বার্ষিক পাঠ পরিকল্পনা দেখতে ক্লিক করুন
প্রাথমিকের পরিমার্জিত বার্ষিক পাঠ পরিকল্পনা ২০২০ সংক্রান্ত সাধারণ নির্দেশনা
• সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের করােনা পরিস্থিতিজনিত কারণে শিখন ঘাটতি পূরণকল্পে ২০২০ সালের সময়াবদ্ধ বার্ষিক পাঠপরিকল্পনার পরিবর্তে এই পরিমার্জিত বার্ষিক
পাঠপরিকল্পনা, ২০২০ প্রণয়ন করা হয়েছে।
• ছুটি শেষে বিদ্যালয় খােলার পর অবশিষ্ট কর্মদিবস হিসাব করে ন্যূনতম আবশ্যিক যােগ্যতা অর্জনের জন্য সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।
• গুরুত্বপূর্ণ এবং যেসকল যােগ্যতা অন্যকোনাে উপায়ে অর্জন করা সম্ভব নয় এবং যে যােগ্যতাগুলাে অর্জন না করে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলে শিখন ঘাটতি তৈরি হবে সেগুলাে রেখেই পাঠ্যক্রম পরিমার্জন করা হয়েছে।
• সারাদেশের মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞ বিষয়-শিক্ষকগণের সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিংয়ে আলােচনা করে প্রয়ােজনীয় সংশােধন সাপেক্ষে এই পরিমার্জিত পাঠপরিকল্পনাটি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
• সিলেবাস/ পাঠক্রম সংক্ষেপ করার ক্ষেত্রে কখনও পূর্বের পাঠপরিকল্পনার পুনরালােচনা অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে, কখনও বা শিক্ষক সহায়িকায় প্রদত্ত পাশাপাশি দুটি সহজে অর্জনযােগ্য সেশনকে একত্র করা হয়েছে।
• শিক্ষকগণ বিশেষ পরিস্থিতিতে তৈরি এই পরিমার্জিত পাঠপরিকল্পনা অনুসরণে শ্রেণিতে শিখন-শেখানাে কার্যক্রম পরিচালনার সময় শিক্ষক সংস্করণ, শিক্ষক সহায়িকার সহায়তা
নিবেন।
• দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ পাঠ পরিমার্জন পরিকল্পনা ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর অনুমােদিত ক্লাসরুটিন অনুসরণ পূর্বক দৈনিক শিখন-শেখানাে কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সারাদেশে অভিন্ন সময়াবদ্ধ বার্ষিক পাঠ পরিকল্পনা অনুসরণ করা হতাে বলেই শিক্ষার্থীদের শিখনফল অর্জনের ক্ষেত্রে সমতা কক্ষ সম্ভব হয়েছে।
• শিক্ষকগণ বিদ্যালয় খােলার প্রথম দিনে প্রতিটি শ্রেণিতে করােনাকালীন ও করােনাপরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সংক্রান্ত নির্দেশনাসমূহ আলােচনা করবেন এবং পরে পাঠ প্রদান শুরু করবেন।
• শিক্ষকগণ বিদ্যালয় খােলার প্রথম দিন হতে এক সপ্তাহ পাঠ পরিকল্পনায় নির্ধারিত বিষয়ের সংশ্লিষ্ট পাঠের সাথে সাথে পূর্ববর্তী পাঠসমূহের (১ জানুয়ারি হতে ১৬ মার্চ) পুনরালােচনা করবেন। তাছাড়া সংসদ টিভি এবং রেডিওতে প্রচারিত পাঠসমূহের সাথে শিক্ষার্থীগণের সম্পৃক্ততার বিষয়টি আলােচনা করবেন। যে তারিখে বিদ্যালয়সমূহ খােলা হবে সেই তারিখ হতে প্রযােজ্য পাঠ পরিকল্পনা (নভেম্বর-ডিসেম্বর) বিদ্যালয়সমূহে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
• শ্রেণিভিত্তিক বিষয়ওয়ারী পাঠ্যক্রম সংক্ষিপ্ত করার হার ও যৌক্তিকতা এই পরিমার্জিত বার্ষিক পাঠপরিকল্পনার শেষে সংযােজন করা হয়েছে। এই পরিমার্জিত বার্ষিক পাঠপরিকল্পনা, ২০২০ বিষয়ে অধিকতর ব্যাখ্যা ও স্পষ্টীকরণের প্রয়ােজন হলে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমিতে তাৎক্ষণিকভাবে যােগাযােগ করা যাবে।