পঞ্চম শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষা আয়োজনে ‘প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড’ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু

পঞ্চম শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষা আয়োজনে ‘প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড’ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু । প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষার্থীদের জন্য ‘প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড’ স্থাপন হচ্ছে। সাধারণ বোর্ডগুলোর আলোকে ছয়টি ইউনিটে নতুন এ বোর্ড গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বোর্ড পরিচালনায় ‘বোর্ড অব অর্ডিন্যান্স’ বা আইনের খসড়া তৈরি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। এটি মূল্যায়নে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে বোর্ডটির কার্যক্রম শুরু হতে পারে।

সারাদেশে ৬৫ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর ৩০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। শিক্ষা বোর্ড ছাড়া এত অধিকসংখ্যক শিক্ষার্থীর পরীক্ষার আয়োজন এবং ফল প্রকাশের চাপ সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন অধিদফতরের কর্মকর্তারা। পরীক্ষা সামাল দিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের অন্য সব কাজ স্থবির হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় ২০২২-২৩ অথবা ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড গঠন করতে চায় মন্ত্রণালয়। এর আলোকে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের জন্য বোর্ড গঠনের একটি খসড়া আইন তৈরি করা হয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ডের খসড়া আইনে দেখা গেছে, সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের আলোকে প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ডের রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। নতুন এ শিক্ষা বোর্ডের কার্যক্রম পরিচালনায় প্রধান ছয়টি ইউনিট রাখা হয়েছে। এর মধ্যে চেয়ারম্যান দফতর, সচিব দফতর, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখা, বিদ্যালয় পরিচালনা শাখা, সিস্টেম অ্যানালিস্ট ও মনিটরিং সেল এবং হিসাব শাখা রয়েছে। এসব বিভাগে মোট ১২ কর্মকর্তার পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। বোর্ডের সর্বোপরি ক্ষমতা চেয়ারম্যানকে দেয়া হয়েছে। সচিব প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অধীনে পরীক্ষা আয়োজন, খাতা মূল্যায়ন এবং ফল প্রকাশের দায়িত্ব থাকছে।

জানতে চাইলে ডিপিই’র সাবেক মহাপরিচালক ও খসড়া আইন প্রণয়ন পরামর্শক শ্যামল কান্তি ঘোষ বলেন, সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের আলোকে প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ডের আইন তৈরি করা হয়েছে। এ বোর্ডের মাধ্যমে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন, সমাপনী পরীক্ষার আয়োজন ও ফল প্রকাশ এবং বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনসহ নানা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। বর্তমানে এসব কাজ অধিদফতর থেকে করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ইতোমধ্যে নতুন এ বোর্ড পরিচালনায় খসড়া আইন তৈরি হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এটা পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে মূল্যায়ন শেষে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে পারে।

ডিপিই সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তোষ থাকলেও পরীক্ষা বাতিল হচ্ছে না। কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষার পাশাপাশি যাবতীয় প্রক্রিয়া এক ছাতার নিচে আনার চেষ্টা চলছে। এরই অংশ হিসেবে পৃথক ‘প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড’ গঠন এবং এটা কীভাবে কার্যকর করা যায় তা নিয়ে কাজ করছেন কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা বাতিলের পরিকল্পনা আপাতত নেই। এ পরীক্ষা আরও যুগোপযোগী করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এজন্য একটি পৃথক শিক্ষা বোর্ড তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। বোর্ড তৈরি হয়ে গেলে এর মাধ্যমে প্রতি বছর সমাপনী পরীক্ষার আয়োজন ও ফল প্রকাশ করা হবে।

পৃথক শিক্ষা বোর্ড গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ বলেন, প্রতি বছর পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার আয়োজন করতে হয়। কিন্তু এ সংক্রান্ত কোনো বোর্ড নেই। তাই প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড গঠনে আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে এটি মূল্যায়নে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, চূড়ান্ত অনুমোদনের পর ঢাকার মধ্যে সুবিধা মতো একটি স্থানে শিক্ষা বোর্ডের কার্যক্রম শুরু হবে। বোর্ডের মাধ্যমে প্রতি বছর পঞ্চম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন, পরীক্ষার আয়োজন, ফল প্রকাশসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হবে। শিক্ষা বোর্ড না থাকায় বর্তমানে সবকিছু অধিদফতরের অধীন পরিচালিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, ‘আমরা আইনের খসড়া তৈরির জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরকে বলেছিলাম, তারা সেটি পাঠিয়েছে। বর্তমানে তা মূল্যায়ন এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য কাজ শেষে দ্রুত ক্যাবিনেটে (মন্ত্রিপরিষদ) পাঠাব। ক্যাবিনেটের অনুমোদনের পর আইন মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনসাপেক্ষে আগামী দুই বছরের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য আলাদা বোর্ডের কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে। ‘পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী-ইবতেদায়ী পরীক্ষা বাতিলের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বরং সরকারি সিদ্ধান্তে এ পরীক্ষা নিয়মিত আয়োজন করতে অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডের মতো প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। বোর্ডের মাধ্যমে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষার আয়োজন ও ফল প্রকাশসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।’ jagonews24

About Sanjida Sultana 2205 Articles
Hi, I am Sanjida Sultana. I am the founder of this site. I regularly update all kind of job information of Bangladesh. I like to update all the latest job information regularly from daily newspaper and online job posting site.