সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব চাকরির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা খোঁজা এখন স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে চাকরি হয়না বহু শিক্ষিত বেকারের। যা খুবই দুঃখজনক।
এত কষ্ট করে পড়ালেখা করে অর্জিত সার্টিফিকেট এর আর কীইবা মূল্য রইলো। এ কারণে চাকরির জন্য সার্টিফিকেট নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে শেষ পর্যন্ত অনেককে বিদেশে পাড়ি জমাতে হয় বা হতাশ হয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিজের স্বপ্নকে চাপা দিয়ে জীবিকার তাগিদে অন্য কোন কাজ খুঁজে নিতে হয়।
আমি মনে করি শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে অভিজ্ঞতা চাওয়ার প্রয়োজনীয়তা গৌণ হয়ে পড়ে। সদ্য পড়ালেখা শেষ করা একজন যুবক কোথায় থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করবে? পরিবারের জন্য তো তাকে দ্রুতই চাকরির জন্য বেরিয়ে পড়তে হয়। চাকরিতে নিয়োগের পর দরকার হলে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাকে দক্ষ করে তোলা যায়।
মনে রাখতে হবে, অনেক দরিদ্র পরিবারের সন্তানকে অবর্ণনীয় কষ্টের মাধ্যমে পড়ালেখা করতে হয়। যেখানে পড়ালেখা করাটাই দুঃসাধ্য হয়ে উঠে সেখানে তাদের অভিজ্ঞতা অর্জিত হবে কেমন করে? এসব বিষয় নিয়োগ কর্তৃপক্ষের বিবেচনা করা উচিত। দেখা যায়, অভিজ্ঞতা থাকার কারণে চাকরিরতরাই পুনরায় চাকরি পাচ্ছে। শিক্ষিত বেকার যুবকরা চাকরি থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে। এমন ধারা অব্যাহত থাকার কারণে বেকারের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পাশাপাশি চাকরিক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় আলোচিত হচ্ছে। তা হলো, নিয়োগের সময় নেয়া নির্ধারিত ফি। অনেকে লেখাপড়া শেষ করে চাকরির জন্য নিয়োগ আবেদনের সাথে ফি দিতে দিতে ফতুর হওয়ার উপক্রম হয়। এই ফি কিন্তু সবার জন্য দেয়া কষ্টকর হয়ে উঠে। বিশেষ করে যারা সুবিধাবঞ্চিত পরিবার থেকে আসে।
চাকরির ধরণের সাথে সাথে বৃদ্ধি পায় ফি এর পরিমাণও। অনেকে এই ফি নেয়াটাকে সমর্থন করেননা। তারা মনে করেন চাকরিপ্রার্থীদের উপর এটা এক ধরণের চাপ। এটি বাতিল হওয়া জরুরি। অথবা নূন্যতম ফি (৫০/১০০ টাকার বেশি হবেনা) নির্ধারণ করা যেতে পারে। বেকার সংকট দূর করতে হলে এর বিকল্প নেই। বেকার থাকার কারণে অনেকে মানসিকভাবে অসুন্থ হয়ে পড়েন। পরিবার ও সমাজে এর ব্যাপক প্রভাব পড়ে।
চাকরির পাইয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে মামু-খালুর দাপটের অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। শোনা যায় আর্থিক লেনদেন নিয়ে নানা কথাও। দুর্নীতির আশ্রয় নেন অনেকে। এসব বন্ধ করতে না পারলে যোগ্য লোকের অভাবে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে নিশ্চিতভাবেই। অভিজ্ঞতা কিংবা ফি এর বাধা না থাকলে বহু শিক্ষিত বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হবে। দুর্নীতি ও তদবির ছাড়াই চাকরি হলে সব ধরণের কর্মস্থলে যোগ্য লোকের অভাব পড়বেনা। তখন মানুষ এর সুফল ভোগ করবে।
চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়াতে (সর্বোচ্চ ৩৫ বছর) নানা আন্দোলন করে যাচ্ছে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। তারা মনে করেন বয়সের কারণে অনেকে সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে পারেননা। অথচ এই বয়স বাড়ার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সেশনজট অনেকাংশে দায়ী। ফলে উপযুক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট অর্জন দীর্ঘায়িত হয়। এসব বিষয় পর্যালোচনার দাবি রাখে।
মাঠ পর্যায়ে শিক্ষিত বেকার যুবকদের বাস্তব পরিস্থিতিকে আমলে নিয়ে সে অনুযায়ী যাবতীয় নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য একটি স্বচ্ছ ও উপযুক্ত নীতিমালা প্রণয়ন করা দরকার। তার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে চাকরির নিয়োগের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা চাওয়া ও ফি নেয়ার বিধান রহিত করা হোক। অগনিত শিক্ষিত বেকার যুবকের কষ্টের অর্জনকে মূল্যায়নের ব্যবস্থা নিতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানাই।
লেখক: শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক