জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০১৯ সালের অনার্স ৩য় বর্ষের পরীক্ষার ফল প্রকাশের দাবি জানিয়েছে ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। অনার্স তৃতীয় বর্ষের তত্ত্বীয় পরীক্ষা ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়। এ পরীক্ষায় ৩১ টি অনার্স বিষয়ে সারাদেশে ৭৯৭ টি কলেজের ৪ লাখেরও বেশি পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। অনার্স ৩য় বর্ষের ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এর ফল প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।
জানা গেছে ৩য় বর্ষের তত্ত্বীয় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও করোনার কারণে ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়া এখনো সম্ভব হয়নি। ৩য় বর্ষের তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ হওয়ার কয়েকদিন পরে দেশে হানা দেয় মহামারী করোনাভাইরাস। যার ফলে আটকে যায় বিজ্ঞান বিভাগের ব্যবহারিক পরীক্ষা। করোনার কারণে কলেজ বন্ধ থাকায় এসব ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়া এখনো সম্ভব হচ্ছেনা। যার ফলে দীর্ঘদিন ধরে আটকে রয়েছে এসব শিক্ষার্থীদের ফলাফল।
অনার্স ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা জানায়, আমাদের তত্বীয় বিষয়গুলোর পরীক্ষা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। করোনার কারণে স্থগিত রয়েছে বিজ্ঞান বিভাগের ব্যবহারিক পরীক্ষা। এসব ব্যবহারিক পরীক্ষা না নেওয়ায় আমাদের রেজাল্ট প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে। যেহেতু এমন পরিস্থিতিতে ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না তাই বিজ্ঞান বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে গড় পদ্ধতি অনুসরন করে ফল প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানায়, ফেব্রুয়ারিতে আমাদের পরীক্ষা শেষ হয়েছে এখন অক্টোবর মাস চলছে কিন্তু আমরা এখনো ৩য় বর্ষের পরীক্ষার ফলাফলই পাইনি। ফলাফল পেতে আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে? কবে আমার তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার ফল পাবো? ফল প্রকাশে এত দীর্ঘসূত্রতার দরুণ আমরা হতাশ। একাডেমিক পড়াশোনার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, দয়া করে অতি দ্রুত আমাদের ফলাফল প্রকাশের ব্যবস্থা করুন।
ক শিক্ষার্থী জানায়, আমার ৩য় বর্ষের একটা সাবজেক্ট ফেইল ছিল। এক্সাম দিলাম। বাট রেজাল্ট তো বের হচ্ছে না। এই এক সাবজেক্ট এর রেজাল্ট এর জন্যে কত গুলা জব সার্কুলার মিস করতেছি। আরো কতগুলা মিস করতে হয় কে জানে। শুনলাম থার্ড ইয়ারের কয়েক ডিপার্টমেন্ট এর ব্যবহারিক রয়ে গেছে। ওই গুলা কি এই মুহুর্তে এই সিচুয়েশনে এতই জরুরী?? এগুলা বাদ দিয়া থার্ড ইয়ারের রেজাল্ট টা পাব্লিশ করা যায় না??? এক-দুইটা ডিপার্টমেন্টের জাস্ট একটা ব্যবহারিক এর জন্যে কত গুলা ছাত্র ছাত্রী ঝুলে আছে। কবে কর্তৃপক্ষ নজরে আনবে??
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, অনার্স ৩য় বর্ষের পরীক্ষার সাথে যুক্ত রয়েছে অনেক ৪র্থ বর্ষের ছাত্র/ছাত্রী। যাদের ৪র্থ বর্ষ সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও এদের মধ্যে অনেকে গ্রেড উন্নয়ন কিংবা ১/২টা বিষয় খারাপ করার কারনে তারা আবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ৩য় বর্ষের পরীক্ষা শেষ আজ কয়েক মাস অতিবাহিত হয়েগেল কিন্তু দুঃখের বিষয় হল মাত্র ব্যাবহারিক পরীক্ষার জন্য এমন একটি বর্ষের ফলাফল আটকে থাকতে পারে না। ব্যাবহারিক পরীক্ষার ফলাফল সংগ্রহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ২/১ এর ব্যাপার মাত্র। অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন জায়গায় অনেক নিয়োগ প্রকাশিত হয়েছে ইতোমধ্যে। কিন্তু এই একটি বর্ষের ফলাফল আটকে থাকার কারনে কেউ সরকারি কোন পদের চাকুরিতে অংশ গ্রহন করতে পারছে না। যা মৃত্যুর থেকেও অনেক কঠিন ব্যাথা হাজারো ছাত্র /ছাত্রীর মনের মধ্যে। তাই যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব সকল নিয়োগের সময়সীমা বিবেচনা করে অনার্স ৩য় বর্ষের ফলাফল ঘোষণা করার জন্য জোরালো আবেদন করছি।।
৩য় বর্ষের তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৮ মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও ফল প্রকাশ না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। যাদের ব্যবহারিক পরীক্ষা আছে তারাও পরীক্ষা দেওয়ার মন মানসিকতা হারিয়ে ফেলেছে। করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অনিশ্চিয়তার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট নিরসনে দ্রুত ফলাফল দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
করোনা পরিস্থিতির কারণে ১৭ মার্চ থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ৩য় বর্ষের ব্যবহারিক পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে অনার্স ৩য় বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে৷ কবে এ পরীক্ষা হবে এর সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অনার্স ৩য় বর্ষের ব্যবহারিক পরীক্ষা শুরু হবে।
জানা গেছে, অক্টোবর পর্যন্ত ডিগ্রি ২য় বর্ষ ও ৩য় বর্ষ, মাস্টার্স শেষ পর্ব, মাস্টার্স ১ম পর্ব, অনার্স ১ম বর্ষ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল। প্রতিটি বর্ষের ৩১টি বিষয়ে পরীক্ষা রয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে এসব পরীক্ষার চূড়ান্ত সূচিও করা যায়নি। অনার্স চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা অর্ধেক হবার পর বন্ধ হয়ে যায় প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও বিভিন্ন প্রফেসনাল কোর্সের শতাধিক পরীক্ষা আটকে আছে।