করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ২০২১ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানা গেছে। আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি আছে। পরিস্থিতি অনুকূলে না এলে এ ছুটি আরও বাড়তে পারে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেন, সাধারণত প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি এবং এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষা হয়। করোনাকালে প্রাতিষ্ঠানিক পাঠদান বন্ধ। এ কারণে পরীক্ষা যথাসময়ে নেয়া হবে কিনা সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে প্রতিষ্ঠান খোলার পরে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এছাড়া এবারের এইচএসসি পরীক্ষা নভেম্বরে নেয়ার বিষয়ে নানা চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এদিকে কতিপয় অভিভাবক স্মারকলিপি জমা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। সেখানে তারা আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো এবং সিলোবাস কমানোর দাবি জানিয়েছেন। তবে, পরীক্ষা পেছানো বা সিলেবাস কমানোর বিষয়ে অভিভাবকদের দাবি নয় বরং মহামারি বিশেষজ্ঞ এবং শিক্ষাবিদদের পরামর্শই মেনেই কাজ করবে মন্ত্রণালয়।
আরো পড়ুন- অনার্স চতুর্থ বর্ষে অটোপাস দেয়া হবে না, পরীক্ষা হবে: উপাচার্য ড. হারুন অর রশিদ
সাধারণত বছরের জুলাই মাসে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রাক-নির্বাচনী আর অক্টোবরে নির্বাচনী পরীক্ষা নেয়া হয়। আর দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রাক-নির্বাচনী বা অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা জুলাই-আগস্টে এবং ডিসেম্বরে নির্বাচনী পরীক্ষা হয়। এরপর নভেম্বরে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ এবং ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ করা হয়।
ইতোমধ্যে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা বাতিল হয়ে গেছে। আগামী বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষাও হয়নি। একাদশ শ্রেণিতে কলেজ পর্যায়ে নেয়া বিভিন্ন ক্লাস টেস্ট আর অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার ফলের ওপর ভিত্তি করে এসব শিক্ষার্থীকে ‘অটো পাস’ দেয়া হয়েছে।
শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসএসসি প্রোগ্রাম দুই বছরের জন্য হলেও ২৫ মাস পর পরীক্ষা নেয়া হয়। যদিও বাস্তবে এসব শিক্ষার্থী দুই বছরে ১৭-১৮ মাস পাঠদান পেয়ে থাকে। অন্যদিকে এইচএসসি দুই বছরের প্রোগ্রাম হলেও বাস্তবে পাঠদান হয়ে থাকে ১৬ মাসের মতো। সেই হিসাবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আগামী বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা।
এমন পরিস্থিতিতে অভিভাবকরা ইতোমধ্যে দাবি তুলেছেন, শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো লেখাপড়া করিয়ে এই দুটি পরীক্ষা নেয়া প্রয়োজন। নইলে শিক্ষার্থীর লেখাপড়া বা দক্ষতা অর্জনে ঘাটতি থাকবে। পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উচ্চশিক্ষায় গিয়ে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে।
পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মকর্তারা বলেন, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যক্রম এক বছর মেয়াদি। এগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবে পরীক্ষার কোনো সম্পর্ক নেই, যেটা এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ে আছে। এই দুই স্তরের শিক্ষাক্রম তৈরি করা হয় আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে। সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ পুনর্বিন্যাস হচ্ছে। কিন্তু আমরা এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায় নিয়ে ভাবছি না। এই দুই শ্রেণির শিক্ষাক্রম বা পাঠ্যসূচি কমানোর কোনো সুযোগ নেই। করোনায় যতটুকু পড়ানো সম্ভব হয়নি, করোনা পরবর্তীকালে ততটুকু পড়িয়ে পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করা জরুরি।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, যৌক্তিক কারণেই এসএসসি ও এইচএসসির সিলেবাস-শিক্ষাক্রম কমানোর সুযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে গোটা পাঠ্যবই শেষ করেই পরীক্ষা নেয়া হবে। সিলেবাস শেষ করতে কতদিন লাগবে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না, যেহেতু কবে নাগাদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া যাবে- তা অনিশ্চিত। হয়তো পরীক্ষা পেছানোর প্রয়োজন হতে পারে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পর শিক্ষার্থীদের অধ্যয়ন এবং বাকি অংশ মূল্যায়ন শেষে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।