শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড আর শিক্ষকেরাই মানুষ গড়ার কারিগর। অত্যন্ত সম্মানজনক ও একুশ শতকের অন্যতম চ্যালেঞ্জিং শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত হতে পারাটা অনেকের কাছেই স্বপ্নের মতো। সে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদান করার মাধ্যমে নিজেকে প্রমাণ করার অন্যতম সুযোগ আসন্ন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা। বাংলাদেশ সরকারিকর্ম কমিশন (বিপিএসসি)-এর অধীনে গত ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ খ্রি. তারিখে অনুষ্ঠিত ২০০ নম্বরের এমসিকিউ ধরনের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণরাই পাচ্ছেন এ মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ। বিপিএসসি ইতোমধ্যেই প্রকাশ করেছে ১ম স্তরের মৌখিক পরীক্ষার সময়সূচি, যার বিজ্ঞপ্তি বিপিএসসির ওয়েবসাইটে শোভা পাচ্ছে। খুব শিগগিরই অবশিষ্ট চাকরিপ্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার সময়সূচিও প্রকাশ করা হবে। করোনা ভাইরাসের (কোভিড- ১৯) প্রাদুর্ভাবের কারণে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণের জন্য প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন বোর্ডে বিপিএসসি ভবনে মাত্র ৪০ জন করে পরীক্ষার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন প্রকাশিত সময়সূচি অনুযায়ী। কে, কোন বোর্ডে পড়বেন, তা পরীক্ষা শুরু হওয়ার মাত্র কিছুক্ষণ আগে লটারির মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। এ পরীক্ষার পূর্ণমান ৫০, পাস নম্বর ২০। এর আগে অনুষ্ঠিত ২০০ নম্বরের এমসিকিউ ধরনের লিখিত পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের সাথে মৌখিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর যোগ করে বিষয়ভিত্তিক সুপারিশপ্রাপ্তদের ভিন্ন ভিন্ন মেধাতালিকা প্রকাশ করা হবে পদসংখ্যার ভিত্তিতে। পরবর্তীতে বিপিএসসি কর্তৃক প্রেরিত ফলাফল বিবরণী বা সুপারিশের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং পুলিশী ও গোয়েন্দা তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ করে সুপারিশপ্রাপ্তদের নিয়োগ ও পদায়ন প্রজ্ঞাপন জারি করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সরকারি মাধ্যমিক-১ শাখা।
সুতরাং বলা যেতে পারে মৌখিক পরীক্ষা লিখিত পরীক্ষার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। যদিও স্বাভাবিকভাবেই লিখিত পরীক্ষায় বেশি নম্বর অর্জনকারী চাকরিপ্রার্থীরা এগিয়ে থাকবেন অনেকটাই। এখন প্রশ্ন আসছে, একজন চাকরিপ্রার্থী কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন মৌখিক পরীক্ষার জন্য? আসলে সত্যি বলতে কী, মৌখিক পরীক্ষার নির্দিষ্ট কোনো সিলেবাস না থাকায় বলা মুশকিল কী ধরনের প্রশ্ন হবে বা কোন অংশ থেকে বেশি প্রশ্ন করা হবে। সাধারণত বিপিএসসির মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডগুলো তিন সদস্যবিশিষ্ট হয়ে থাকে। এর মধ্যে একজন থাকেন বিপিএসসির চেয়ারম্যান অথবা অন্য একজন সাংবিধানিক সদস্য। বাকি দুজন সদস্য সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক, জাতীয় অধ্যাপক, প্রফেসর অ্যামিরেটাস, লেখক, গবেষক, বুদ্ধিজীবী, স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব, বিজ্ঞানী, প্রাক্তন বা বর্তমান আমলা ও সরকারি কর্মকর্তা এবং অন্যান্য পেশাজীবীদের মধ্য থেকে বিপিএসসি কর্তৃক মনোয়নপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন। যেহেতু এবার বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষা হচ্ছে, তাই সহজেই অনুমান করা যায়, অন্য দুই সদস্যের একজন হবেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ শিক্ষক এবং অন্যজন হবেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ বা অধিদপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা অথবা জাতীয় অধ্যাপক, প্রফেসর অ্যামিরেটাস, লেখক, গবেষক, বুদ্ধিজীবী, স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব, বিজ্ঞানী, প্রাক্তন বা বর্তমান আমলা ও সরকারি কর্মকর্তা এবং অন্যান্য পেশাজীবীদের মধ্য থেকে কেউ। যেহেতু বোর্ডে এক বা একাধিক সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ শিক্ষক এবং শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ থাকবেন, কাজেই ধরে নেওয়া যেতে পারে ৫০-৬০% প্রশ্ন আসতে পারে সংশ্লিষ্ট বিষয় থেকেই। এক্ষেত্রে মাধ্যমিক হতে স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত পঠিত নিজ বিষয়ের মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো ভালোভাবে আত্মস্থ করে যেতে হবে। নিজের বিষয় সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে বা ভুল দিলে বোর্ড অসন্তুষ্ট হয়ে যেতে পারে, যা চাকরিপ্রার্থীর ফলাফলে খারাপ প্রভাব ফেলবে। এজন্য নিজ বিষয় সংশ্লিষ্ট জ্ঞান অবশ্যই ভালো থাকতে হবে এবং মৌখিক পরীক্ষায় এর প্রকাশভঙ্গিও সাবলীল ও প্রাঞ্জল হতে হবে।
মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে মার্জিত পোশাক একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সঠিক নিয়মে মাস্ক পরিধান অবশ্যই করতে হবে। পাশাপাশি বোর্ডের বাইরে ও ভেতরে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের অবহেলা করা চলবে না। পুরুষ পরীক্ষার্থীরা মার্জিত রঙের ফর্মাল শার্ট ইন করবেন, মার্জিত রঙের ফর্মাল ফিটিং প্যান্টের সাথে। শার্ট ফুল হাতার হবে এবং পায়ে মার্জিত ডিজাইনের স্যু মোজা দিয়ে পরিধান করতে হবে। টাই সঠিকভাবে বাঁধতে জানলে পরবেন, নচেৎ নয়। শীত পড়লে মার্জিত রঙ ও ডিজাইনের স্যুট বা ব্লেজার পরতে পারেন, কিন্তু ভুলেও গরমের সময়ে পরবেন না। চুল পরিপাটি করে ছেঁটে যেতে হবে, মার্জিতভাবে আঁচড়াতে হবে এবং চেহারা ক্লিন শেভড হতে হবে (ধর্মীয় কারণে দাঁড়ি না রেখে থাকলে)। ব্যবহার করতে পারেন হালকা মনোরম ঘ্রাণযুক্ত পারফিউম। ধর্মীয় কারণে যাঁরা দাঁড়ি রাখেন, তাঁরা দাঁড়ির ছাঁট যেন ঠিক রাখেন, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পাশাপাশি ধর্মীয় পোশাকে অভ্যস্ত পুরুষেরা মার্জিত ও পরিষ্কার টুপি, পাঞ্জাবি, পায়জামা ও কোটি পরিধান করবেন। এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় যে, জুতো হিসেবে অবশ্যই মোজাসহ স্যু থাকতে হবে। নারীদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো ড্রেসকোড না থাকলেও পোশাকে মার্জিত, রুচিশীল ও শালীন হওয়া প্রয়োজন। মার্জিত রঙ ও ডিজাইনের শাড়ির সাথে ফুল হাতার ব্লাউজ ব্যবহার করতে পারেন। হালকা মেকআপ করতে পারেন, তবে উগ্র মেকআপ করা চলবে না একদমই। রুচিশীল ও মার্জিত ডিজাইনের জুতো পরিধান করবেন। কেউ চাইলে সালোয়ার-কামিজ ও ওড়নাও পরিধান করতে পারেন। তবে সেটিকেও হতে হবে মার্জিত, রুচিশীল ও শালীন। ধর্মীয় কারণে যাঁরা পর্দা করেন, তাঁরা মার্জিত রঙ ও ডিজাইনের বোরখা বা আবায়া ও হিজাব পরিধান করবেন অবশ্যই। সকল পরীক্ষার্থীকে অবশ্যই পরীক্ষার সময়সূচির বিজ্ঞপ্তির সাথে চাহিত সনদ, ছবি এবং মূলকপি ও ফটোকপি কাগজপত্রসমূহ বর্ণিত পরিমাণে সেট আকারে ট্রান্সপারেন্ট ফোল্ডারে করে নিয়ে যেতে হবে। মোবাইলসহ কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস সাথে নিয়ে যাওয়া যাবে না এবং বিজ্ঞপ্তিতে বর্ণিত সকল আচরণবিধি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে হবে। পরীক্ষা শুরু হওয়ার এক থেকে দেড় ঘন্টা আগেই কেন্দ্রে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে। পরীক্ষার দিনের যে কোনো একটি সংবাদপত্রের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদগুলোতে চোখ বুলিয়ে নিতে হবে। পাশাপাশি ওই দিনে ১৯৭১ সালে কী হয়েছিলো, ওই দিনের আরবি মাস ও তারিখ, বাংলা মাস ও তারিখ সম্পর্কে ধারণা নিয়ে রাখতে হবে। বাংলা ভাষার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন শব্দের বানান, পরিবর্তিত বানান ও সঠিক উচ্চারণ সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে।
নিজ একাডেমিক বিষয়ের পাশাপাশি অন্যান্য কিছু বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে মৌখিক পরীক্ষার জন্য। এগুলো হলো- নিজের পরিচিতি (Introduce Yourself), নিজ এলাকা, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি, নদ-নদী, অবস্থান, এলাকার বিখ্যাত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো, মুক্তিযুদ্ধ ও পূর্ববর্তী সংগ্রাম, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা, প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ (বিশেষ করে অতিসম্প্রতি প্রয়াত), সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও পর্যটন সংক্রান্ত বিষয়াবলি, শিক্ষা ব্যবস্থা, পরীক্ষা ব্যবস্থা, শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনা, প্যাডাগজি, শিক্ষক বাতায়ন, কিশোর বাতায়ন, জুম, গুগোল মিট/গুগোল ক্লাসরুম, কাহুট, সাম্প্রতিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনা ও পরিস্থিতি, করোনা ভাইরাস সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলি, অনলাইন ক্লাস, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস, সৃজনশীল প্রশ্ন, ব্লুমস টেক্সোনমি, শিক্ষানীতি, শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনা, শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী/উপমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভাগ ও অধিদপ্তরসমূহ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জাতীয় তথ্য বাতায়ন, বয়োঃসন্ধিকাল, কিশোর অপরাধ, সুশাসন ও মুল্যবোধ, সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, বাংলার ইতিহাস, সাহিত্য ও সংস্কৃতি, বাংলাদেশের বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা, শিক্ষার সংজ্ঞা ও শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য ও পরিসংখ্যান, বিভিন্ন শিক্ষা কমিশন, শিক্ষার বিভিন্ন সংস্কার, ছাত্র আন্দোলন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, ইউনেস্কো ও শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন সংস্থা/এনজিও, রাষ্ট্র, আইন, নাগরিকত্ব, সুনাগরিক, সামাজিক পরিবর্তন, গণতন্ত্র, নির্বাচন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ভূ-প্রকৃতি, অবস্থান, আইসিটির মৌলিক বিষয়সমূহ, শিক্ষকতায় আসতে চাওয়ার কারণ ইত্যাদি। এর বাইরে সরকারি মাধ্যমিকের নিয়োগবিধি ও পদোন্নতি এবং বিভিন্ন পদ ও এসব পদের কাজ, মাধ্যমিকের বিদ্যমান সমস্যা ও এগুলোর সমাধান সম্পর্কে জেনে যেতে হবে।
একুশ শতকের শিক্ষকের দায়িত্ব, কর্তব্য ও দক্ষতাসমূহ নিয়েও প্রশ্ন হতে পারে। সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন সরকারের নীতির সাথে তা সাংঘর্ষিক না হয়ে যায়। কেননা মূলত সরকারি মাধ্যমিকের একজন শিক্ষক হিসেবে আপনার দায়িত্ব হলো সরকারের শিক্ষানীতির বাস্তবায়নের জন্য গৃহিত পদক্ষেপসমূহের সফল বাস্তবায়ন এবং শিক্ষাক্রমের আলোকে আধুনিক পদ্ধতির পাঠদান। বিএড, বিভিন্ন ইন-সার্ভিস প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রকল্প সম্পর্কেও ধারণা নিয়ে যেতে হবে। ঠিক তেমনিভাবে ধারণা রাখতে হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালাসহ শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন আইন, বিধিমালা ও নীতিমালা সম্পর্কে। ভালোভাবে ধারণা রাখতে হবে নিজ বিষয়ের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির সিলেবাস ও পাঠ্যবই সম্পর্কে। বিভিন্ন ধরনের আইকিউ টেস্টও নিতে পারেন বোর্ড সদস্যরা, পরীক্ষার্থীর মানসিক দক্ষতা যাচাই করার জন্য। চাকরিপ্রার্থী অন্য চাকরি করলে কেন সেটা ছেড়ে আসতে চাচ্ছেন সেটা জিজ্ঞেস করা হতে পারে, আবার আগের চাকরির বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কেও জানতে চাইতে পারে। একটা ছোট উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে চাই। আমি যখন সরকারি মাধ্যমিকে চাকরিরত অবস্থায় ‘পরিসংখ্যান কর্মকর্তা’ পদের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে বিপিএসসিতে যাই, তখন আমাকে শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে অনেকগুলো প্রশ্ন করা হয়েছিলো। এর মধ্যে ছিলো, জেএসসি পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা, প্রশ্নফাঁস প্রতিরোধের উপায় ইত্যাদি। জেএসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রে আমি অষ্টম শ্রেণি শিক্ষাগত যোগ্যতার চাকরির ক্ষেত্রে প্রকৃত সনদের প্রয়োজনীয়তা এবং বৃত্তির ক্ষেত্রে সকলের প্রতিযোগিতা ও পাঠ্যক্রম আয়ত্তে আনার বিষয়টিকে সামনে এনেছিলাম। প্রশ্নফাঁস প্রতিরোধে বিপিএসসির মডেলকে সামনে এনেছিলাম। অর্থাৎ তিন-চারটি সেট প্রশ্নপত্র তৈরি করে সকল সেট কেন্দ্রে পাঠিয়ে, পরীক্ষার মাত্র কিছুক্ষণ আগে লটারি করে সেট ঠিক করে, এসএমএস-এর মাধ্যমে কেন্দ্রসচিবকে জানিয়ে, তারপর প্রশ্ন খুলে হলে বন্টন করা। এভাবেই বোর্ডে একজন পরীক্ষার্থীকে উত্তরের ক্ষেত্রে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে, যা বোর্ডকে অনেক বেশি আকর্ষিত করবে।
মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে প্রবেশের সময় সালাম দিয়ে ঢুকতে হবে ও ঢোকার অনুমতি নিতে হবে। বসার অনুমতি পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কিছুক্ষণ অতিবাহিত হয়ে গেলেও বসার অনুমতি না পাওয়া গেলে, বিনয়ের সাথে বসার অনুমতি চাওয়া যেতে পারে। পুরো সময় নম্রতা ও ভদ্রতা বজায় রাখতে হবে। উগ্রতা পরিহার করতে হবে। আত্মবিশ্বাস ও বিজ্ঞান মনস্কতার সাথে প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। বডিল্যাঙ্গুয়েজ যেন ঠিক থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কণ্ঠস্বর শুদ্ধ ও স্পষ্ট হওয়া বাঞ্ছনীয়। আঞ্চলিকতা পরিহার করতে হবে। বোর্ড সদস্যদেরকে নারী, পুরুষ, তৃতীয় লিঙ্গ নির্বিশেষে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করতে হবে। ইংরেজিতে করা প্রশ্নের উত্তর ইংরেজিতে ও বাংলায় করা প্রশ্নের উত্তর বাংলায় দিতে হবে। কোনো প্রশ্নের উত্তর না জানলে বিনয়ের সাথে সরাসরি ‘উত্তরটি আমার জানা নেই’ বলতে হবে। জোর করে, চাপাবাজি করে, আন্দাজে বা বানিয়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়া একদমই চলবে না। কোনো বিষয়ে নিশ্চিত জানা থাকলে প্রশ্নকর্তা যতোই বিষয়টাকে প্যাঁচাতে চান না কেন, আত্মবিশ্বাসের সাথে নিজের উত্তরে অটল থাকতে হবে। সবসময়ে হাসিমুখে, আই কন্টাক্ট ঠিক রেখে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করতেহবে। এজন্য ইউটিউবে বিভিন্ন মক ভাইভার ভিডিয়োগুলো দেখা যেতে পারে। মৌখিক পরীক্ষা শেষে সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বের হতে হবে। প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময়ে এমনভাবে দিতে হবে যেন ওই উত্তরের সূত্র ধরেই পরীক্ষার্থীকে এমন প্রশ্ন করা হয়, যার উত্তর পরীক্ষার্থী খুব সহজেই দিতে পারেন। সর্বোপরি নার্ভাসনেস ও জড়তা কাটিয়ে সাবলীলভাবে মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কোনো মানসিক চাপ নেওয়া চলবে না, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন।
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিষয়ভিত্তিক সহকারী শিক্ষক পদটিকে ২০১২ সালে ১০ম গ্রেডের (তৎকালীন ২য় শ্রেণি) নন-ক্যাডার গেজেটেড মর্যাদা প্রদান করা হয়। এরপর থেকেই নিয়োগ সুপারিশের ক্ষমতা চলে যায় বিপিএসসি-এর হাতে। পরবর্তীতে ৩৪তম, ৩৫তম ও ৩৬তম বিসিএস থেকে নন-ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্তদের এ পদে নিয়োগ প্রদান করা হলেও, এবারই প্রথম সরাসরি পরীক্ষার মাধ্যমে এ পদে শিক্ষক নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হবে। এ নিয়োগ পরীক্ষার পর সরকারি মাধ্যমিকে আরেকটি সরাসরি নিয়োগ পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি জারি হতে কিছুটা সময় লাগবে, তা খুব সহজেই অনুমেয়।
বিসিএস নন-ক্যাডার সহকারী শিক্ষকেরা যোগদানের পর থেকেই কার্যত বদলে যেতে শুরু করেছে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো। মেধা, মনন, দক্ষতা, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে নবীন নন-ক্যাডার শিক্ষকেরা আধুনিক ও মানসম্মত মাধ্যমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। তাই তাঁদের হাতকে শক্তিশালী করতে, এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন চাকরি প্রত্যাশীরা, সেই কামনাই করি। সকলের মৌখিক পরীক্ষার জন্য রইলো শুভ কামনা।