‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম ও সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১৩তম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। আর ৬৫ হাজার ৬২০টি বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ সৃষ্টির প্রক্রিয়া চলছে, যাঁদের ১২তম গ্রেড দেওয়া হবে। আগামী দিনে শিক্ষকদের বেতন গ্রেড আরো উন্নয়ন করা হবে।’
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। করোনাকালে প্রাথমিক শিক্ষার অবস্থা, প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা, গত দেড় বছরের অর্জনসহ নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
জাকির হোসেন বলেন, “করোনার প্রাদুর্ভাবের পরপরই গত ৭ এপ্রিল থেকে সংসদ টেলিভিশনে শ্রেণি কার্যক্রম ‘ঘরে বসে শিখি’র সম্প্রচার শুরু হয়েছে। তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক শিক্ষার্থী, যাদের কাছে টেলিভিশন বা ইন্টারনেট সুবিধা নেই, তারা এসব কার্যক্রমের বাইরে রয়ে যাচ্ছে। তাই রেডিওর মাধ্যমে পাঠদান চালু করতে যাচ্ছি। এ ছাড়া শিক্ষাবিষয়ক জাতীয় হেল্পলাইন চালু করা হচ্ছে। ৩৩৩৬ নম্বরে কল করে পাঁচ মিনিট পর্যন্ত বিনা খরচে শিক্ষকদের পরামর্শ নেওয়ার সুযোগ পাবে শিক্ষার্থীরা। করোনার মধ্যে শিক্ষকদের ধারাবাহিক পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে চালু হচ্ছে অনলাইন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম।”
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কবে নাগাদ আমরা স্কুলগুলো খুলতে পারব, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। সেপ্টেম্বর নাগাদ স্কুল খোলা সম্ভব হলেও চলতি শিক্ষাবর্ষেই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীসহ অন্যান্য পরীক্ষা শেষ করা যাবে। হয়তো পাঠ্যক্রম কিছুটা সংক্ষিপ্ত করার প্রয়োজন হতে পারে। তবে অক্টোবরেও স্কুল খোলা সম্ভব না হলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত চলতি শিক্ষাবর্ষ বৃদ্ধি করা হতে পারে।’
দেশের প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক শিফট চালুর পরিকল্পনার কথা জানান প্রতিমন্ত্রী। যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দুই শিফট চললে শিক্ষকদের দীর্ঘ সময় স্কুলে থাকতে হয়। এতে তাঁদের মনোনিবেশে বিঘ্ন ঘটে। বেশির ভাগ স্কুলে এক শিফট চালুর প্রধান অন্তরায় অবকাঠামোগত সমস্যা। আমরা প্রয়োজনীয়সংখ্যক ভবন ও শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করছি। নির্মাণকাজ শেষ হলে সব স্কুলে এক শিফট চালু করা হবে।’
শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে জাকির হোসেন বলেন, ‘দুই বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালুর ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন জাতীয়করণকৃত ২৬ হাজার ১৯৩ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সমানসংখ্যক সহকারী শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া শূন্য পদ মিলিয়ে শিগগিরই ৪০ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।’
জাকির হোসেন বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান করেন। এর ধারাবাহিকতায় তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালে আরো ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেন।’
মুজিববর্ষে মন্ত্রণালয়ের কর্মসূচির ব্যাপারে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘২১ লাখ নিরক্ষরকে সাক্ষরতা প্রদান করা হবে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু বুক কর্নার কার্যকর করা হবে। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শহীদ মিনার স্থাপন করা হবে। তৃতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির সব শিক্ষার্থীর বাংলা পঠন দক্ষতা শতভাগে উন্নীত করা হবে। চলমান স্কুল ফিডিং প্রগ্রাম সারা দেশে চালুর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সূত্র:কালের কণ্ঠ