এসএসসিতে পরীক্ষা পাঁচ বিষয়ে, সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন

এসএসসিতে পরীক্ষা পাঁচ বিষয়ে, সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন । প্রাক প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি শিক্ষাক্রম পাল্টে যাচ্ছে। বিষয় ও সময় কমিয়ে বইয়ে আনা হচ্ছে পরিবর্তন। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা এক বছরের পরিবর্তে দুই বছর হবে। দশম শ্রেণির আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষা থাকবে না। একজন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান মানবিক নাকি ব্যবসায় শিক্ষায় পড়বে, সেটি ঠিক হবে উচ্চ মাধ্যমিকে গিয়ে, যা এখন নবম শ্রেণিতে হয়।

পাঠ্যবই, ছুটি, পাবলিক পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের কাজ শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। নতুন সব উদ্যোগই পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন শুরু করা হবে। এনসিটিবির রূপরেখায় বলা হয়েছে, পাঠদানের সময় ‘ধারাবাহিক মূল্যায়ন’ (শ্রেণিকক্ষে মূল্যায়ন) ও বার্ষিক পরীক্ষার মাধ্যমে ‘সামষ্টিক মূল্যায়নের’ ভিত্তিতে শিক্ষার্থী পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে। আর প্রথম পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ‘দশম শ্রেণির’ পাঠ্যসূচি অনুযায়ী দশম শ্রেণিতেই।

২০২২ সাল থেকে এই রূপরেখার আলোকে কারিকুলাম ও পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তন পর্যায়ক্রমে শুরু হবে। প্রথম পাবলিক পরীক্ষা (এসএসসি) অনুষ্ঠিত হবে দশম শ্রেণিতে। শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির আলোকেই এই পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। দশম শ্রেণিতে কোনো বিভাগ থাকবে না। সবাইকে ১০টি বিষয় পড়তে হবে। এর মধ্যে পাঁচটি বিষয় এসএসসি পরীক্ষা হবে। সেগুলো হলো: বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান।

এছাড়া বাকি পাঁচটি বিষয়—জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, ভালো থাকা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতিতে পুরোটাই ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে। বর্তমানে নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচি মিলিয়ে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ৩২ কার্যদিবসে এসএসসি পরীক্ষা হয়। নতুন পদ্ধতি কার্যকর হলে পাঁচ কার্যদিবসেই এসএসসি পরীক্ষা শেষ হবে।

আর একাদশ শ্রেণি শেষে ও দ্বাদশ শ্রেণি শেষে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির সম্মিলিত ফলের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে। বর্তমানে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি শেষে একটি পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই স্তরে ৩০ শতাংশ ধারাবাহিক মূল্যায়ন ও ৭০ শতাংশ পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন হবে।

পছন্দের এলাকায় পার্টটাইম/ফুলটাইম চাকরি খুঁজে পেতে [button color="green" size="small" link="https://link.shomvob.co/topcircularbd" icon="" target="true"]এই অ্যাপটি ইন্সটল করে[/button]এখনই আবেদন করুন

নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি অনুযায়ী, প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শতভাগ ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে। এসব শ্রেণিতে কোনো বার্ষিক পরীক্ষা হবে না। প্রাক প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ২০২২ এবং ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তৃতীয় শ্রেণিতে নতুন এই মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু হবে।

চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৭০ শতাংশ নম্বরের ধারাবাহিক মূল্যায়ন এবং বার্ষিক পরীক্ষা হবে ৩০ শতাংশ নম্বরের। এই পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হবে চতুর্থ শ্রেণিতে ২০২৪ এবং পঞ্চম শ্রেণিতে ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে। এছাড়া ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ৬০ শতাংশ ধারাবাহিক মূল্যায়ন এবং ৪০ শতাংশ বার্ষিক পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন হবে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে ২০২২ এবং ৮ম শ্রেণিতে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

তবে এই রূপরেখায় পঞ্চম শ্রেণি শেষে প্রাথমিক ও অষ্টম শ্রেণি শেষে জেএসসি পরীক্ষার কথা উল্লেখ নেই। এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (কারিকুলাম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতিতে এ দুটি পরীক্ষার কথা উল্লেখ নেই। সরকার এটা নির্বাহী আদেশে নিয়ে থাকে। যদি সরকার চায় তাহলে পরীক্ষা নিতে পারবে। তবে মূল্যায়নের কাঠামো এই রূপরেখা অনুযায়ী হবে। সরকার নির্বাহী আদেশে পিইসি পরীক্ষা নিতে চাইলে ৭০ শতাংশ ধারাবাহিক মূল্যায়ন এবং ৩০ শতাংশ পরীক্ষার মাধ্যমে নিতে হবে। তারপরই চূড়ান্ত ফল হবে।

পরীক্ষা পদ্ধতির বিষয়ে রূপরেখায় বলা হয়েছে, শিক্ষাক্রমে যোগ্যতাকে জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি, গুণাবলি ও মূল্যবোধের সমন্বয়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতি বিশেষত পাবলিক পরীক্ষা শিক্ষার্থীর মূলত বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ মূল্যায়ন করে। তাই প্রচলিত পাবলিক পরীক্ষা পদ্ধতি বহাল রেখে শিক্ষাক্রমের মূল উদ্দেশ্য অর্থাত্ শিক্ষার্থীর জ্ঞানের পাশাপাশি দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি, গুণাবলি ও মূল্যবোধ অর্জন সম্ভব হবে না। তাই পাবলিক পরীক্ষায় সামষ্টিক মূল্যায়নের পাশাপাশি শিখনকালীন মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

 

সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন, জাতীয় দিবসে খোলা: বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি সাধারণত একদিন (শুক্রবার)। নিজেদের সিদ্ধান্তে কোনো প্রতিষ্ঠান দুইদিনও ছুটি রাখে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও দুইদিন ছুটি থাকবে। তবে, মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিবস, স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, জাতীয় শোক দিবস এবং বিজয় দিবসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হবে। ওই দিবসগুলোতে সব শিক্ষার্থীকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হবে কিন্তু ক্লাস হবে না। বিভিন্ন ধরণের কর্মসূচি থাকবে সেগুলো ধারাবাহিক মূল্যায়নে যুক্ত হবে।

শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিদ্যমান শিক্ষাক্রম অবশ্যই যুগপযোগী করতে হবে কিন্তু আকাশকুসুম শিক্ষাক্রম করে লাভ হবে না। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের যোগ্যতা যদি অর্ধেক শিক্ষকের না থাকে, তাহলে এই পরিবর্তন করেই কি লাভ হবে? তিনি বলেন, আগের শিক্ষাক্রমের কি কি বাস্তবায়িত হয়েছে, আর কী কী হয়নি, সেটাও বিবেচনায় নিতে হবে।

প্রাক-প্রাথমিক দুই বছর : নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা হবে দুই বছর মেয়াদি, যা চার বছর বয়সী শিশুদের দিয়ে শুরু করে ছয় বছর পর্যন্ত চলবে। প্রাক-প্রাথমিকে দুটি শ্রেণি থাকবে। একটি হবে প্রাক-প্রাথমিক প্রথম শ্রেণি এবং প্রাক-প্রাথমিক দ্বিতীয় শ্রেণি। বর্তমানে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের এক বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হয়। আর ছয় বছরের বেশি বয়সী শিশুদের প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, এ বিষয়ে ইতিমধ্যে সরকারের উচ্চপর্যায়ের অনুমোদন পাওয়া গেছে।

কমছে বিষয়: নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১০ ধরনের শেখার ক্ষেত্র ঠিক করা হয়েছে। এগুলো হলো ভাষা ও যোগাযোগ, গণিত ও যুক্তি, জীবন ও জীবিকা, সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব, পরিবেশ ও জলবায়ু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও সার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি প্রাক-প্রাথমিকের শিশুদের জন্য আলাদা বই থাকবে না, শিক্ষকেরা শেখাবেন। প্রাথমিকের জন্য আটটি বিষয় নির্বাচন করা হয়েছে। এগুলো হলো

বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ধর্মশিক্ষা, ভালো থাকা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। এর মধ্যে “ভালো থাকা” এবং “শিল্প ও সংস্কৃতি’ বিষয়ে আলাদা বই থাকবে না। এগুলো শিক্ষকেরা শেখাবেন, যার জন্য বই দেওয়া হবে।

আর ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ১০টি অভিন্ন বই পড়ানো হবে। এগুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, জীবন ও জীবিকা, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ডিজিটাল প্রযুক্তি, ধর্মশিক্ষা, ভালো থাকা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। বর্তমানে মাধ্যমিকে ১২ থেকে ১৪টি বই পড়ানো হয়। এখন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কিছু অভিন্ন বই পড়তে হয়। আর নবম শ্রেণিতে শাখা
বিভাজন হয়। নতুন শিক্ষাক্রমে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে শাখা পরিবর্তন হবে।

কবে থেকে নতুন বই: এনসিটিবির সূত্রমতে, প্রথম বছর (২০২২) প্রাক- প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণি, প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে তৈরি বই পাবে। এর পরের বছর (২০২৩) অষ্টম শ্রেণি এবং ২০২৪ সালে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নতুন শিক্ষাক্রমের বই দেওয়া হবে। ২০২৬ সালে উচ্চমাধ্যমিকের বই দেওয়ার কথা।

বিদ্যমান ও নতুন শিক্ষাক্রমের পার্থক্য কী : এনসিটিবি সূত্রমতে, নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা অর্জনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সাধারণভাবে বলা হয়, একজন শিক্ষার্থীর জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা সমদ্বিতভাবে অর্জিত হলে তার যোগ্যতা গড়ে ওঠে।

পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি শিক্ষানীতি: এর আগে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কেমন হবে তা নির্ধারণে ২০১০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছিল সরকার। কিন্তু ওই শিক্ষানীতি অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করাসহ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো দীর্ঘ সময়েও বাস্তবায়ন করেনি সরকার। বরং শিক্ষানীতি উপেক্ষা করে জাতীয়ভাবে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। মাধ্যমিক শিক্ষা নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত করার সিদ্ধান্তও বাস্তবায়িত হয়নি। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে ভাগ করে দুটি আলাদা অধিদপ্তর যথাক্রমে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা অধিদপ্তর করার কথা ছিল শিক্ষানীতিতে। কিন্তু সেটি হয়নি। অবশ্য মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর হয়েছে। আবার শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষা আইন জরুরি হলেও সেটি করতে পারেনি সরকার। কেবল আইনের খসড়া নিয়েই ১০ বছর ধরে আলোচনা চলছে।

[button color="green" size="medium" link="https://link.shomvob.co/topcircularbd" icon="" target="true"]Apply Online Here[/button]

 

About Sanjida Sultana 2139 Articles
Hi, I am Sanjida Sultana. I am the founder of this site. I regularly update all kind of job information of Bangladesh. I like to update all the latest job information regularly from daily newspaper and online job posting site.